Banner

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতি: সব কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা

 

নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা ছয় সমন্বয়কের


রোববার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) অফিসে আলোচনা শেষে এক ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। এই ঘোষণাটি দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলাম বলেন যে, "কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানান সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।"

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই সমন্বয়ক আরও উল্লেখ করেন যে, "সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।"


পটভূমি

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেয়। এক পর্যায়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। তাদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের অবরোধও দেয়। এক পর্যায়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে হল খালি করার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে সরকার।

গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।


সহিংসতা ও ক্ষয়ক্ষতি

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, "সহিংসতায় কখনো বলা হচ্ছে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আসলে মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রসহ বিভিন্নভাবে এ তথ্য জানা গেছে।"

তিনি আরও বলেন, "মৃতদের মধ্যে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে। নিহতদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ কিংবা কোন পেশার মানুষ কতজন- সেটি নির্ধারণের কার্যক্রমও চলছে।"



বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের সমস্ত কর্মসূচি প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকার এবং সাধারণ জনগণের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করেছে। তবে আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতার জন্য সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবি এখনও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কর্তৃক কোটার যৌক্তিক সংস্কারের পর আন্দোলনের সমাপ্তি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুসংবাদ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, সহিংসতার প্রকৃত সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির বিশদ বিবরণ এখনও নির্ধারণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে আরও স্পষ্ট হবে।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.