Banner

শিশু-কিশোরদের গ্রেপ্তার ও আটকে ৩০ সংস্থার উদ্বেগ: শিশুদের অধিকার রক্ষার আহ্বান

 বাংলাদেশে শিশু-কিশোরদের গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনায় দেশব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিশু-কিশোরদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক করার ঘটনায় ৩০টি সংগঠন থেকে সমন্বিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই সংগঠনগুলো শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনের জন্য গঠিত একটি কোয়ালিশনের অন্তর্ভুক্ত, যার সচিবালয় হলো বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।



 উদ্বেগের মূল কারণ


কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিশু-কিশোরদের গ্রেপ্তার ও আটক রাখার প্রক্রিয়া বাংলাদেশ সংবিধান, বিদ্যমান আইন, এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পরিপন্থী। গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিশুদেরকে নির্যাতন ও অপমানের শিকার হতে হচ্ছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।


আইনি প্রেক্ষাপট


বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, **শিশু আইন ২০১৩**-এর ৭০ ধারা অনুযায়ী, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও, **শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করার নীতিমালা ২০১১** অনুসারে শিশুদের প্রতি কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক শাস্তি বেআইনি। এই আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে শিশুদের প্রতি যে কোনো ধরনের নির্যাতন বা অপমানমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।


 আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নীতিমালা


বাংলাদেশ শিশু অধিকার সনদের আওতাভুক্ত একটি দেশ, যেখানে **অনুচ্ছেদ-২০**-এ বলা হয়েছে: 

> “কোনো শিশু সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে তার পারিবারিক পরিবেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে কিংবা সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় ওই পরিবেশে তাকে রাখা সমীচীন মনে না হলে সে রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ সুরক্ষা ও সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।”


এটি স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশকে শিশু অধিকার রক্ষা করতে হবে। 


সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা


বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে শিশু-কিশোরদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এবং শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী আচরণ করতে হবে। 


সংগঠনগুলোর দাবি


উক্ত কোয়ালিশন থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়েছে যে:


1. **শিশুদের গ্রেপ্তার ও আটক থেকে মুক্তি দিতে হবে:** শিশুদের অধিকার সুরক্ষা ও আইনানুগ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

   

2. **শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে:** সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আইনের আওতায় এনে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

   

3. **শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে:** শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদান করে শিক্ষার পরিবেশে মানসিক ও শারীরিক শাস্তি থেকে মুক্ত রাখতে হবে।


4. **আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হবে:** শিশু অধিকার সনদের নির্দেশনা অনুসারে শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।


এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, শিশু-কিশোরদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্লেষণ এবং আলোচনা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য আরো কার্যকর নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।  উল্লেখযোগ্য আইন ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে শিশুদের একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ প্রদান করা বাংলাদেশের জন্য এখন সময়ের দাবি।


সংস্থাগুলোর ভূমিকা


এই কোয়ালিশন ও অন্যান্য সংগঠনগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা অবিলম্বে এই ঘটনা তদন্ত করে এবং শিশুর অধিকার সুরক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এছাড়াও, তারা নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যাতে বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় আরো সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়। 


এই ঘটনা বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সরকারের কর্তব্য হবে শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় আরো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।




No comments:

Banner

Powered by Blogger.