Banner

চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে বিক্ষোভ: ককটেল না সাউন্ড গ্রেনেড? পুলিশের দাবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে বিভ্রান্তি

 ### **চট্টগ্রামে পুলিশের ককটেল-সাউন্ড গ্রেনেডের সংঘর্ষ: প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি**

ছবিঃ সংগৃহীত


চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় সোমবার বিকেলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য কোতোয়ালি থানার এসআই মোশাররফ হোসেন আহত হন। পুলিশ অভিযোগ করে, বিএনপি-জামায়াতের সদস্যরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পুলিশ নিজের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডের কারণে আহত হন।  


 **বিক্ষোভের পটভূমি:**

চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ের কদম মোবারক এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তি ও কারফিউ প্রত্যাহারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা জড়ো হন। বিকেল সাড়ে ৪টায় আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশে বসে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ১৫ মিনিট পর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এই নিক্ষেপের ফলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


 **পুলিশের দিক থেকে অভিযোগ:**

ঘটনার পর কোতোয়ালি থানার এসআই নয়ন বড়ুয়া বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০০ থেকে ৪০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে থাকা বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যার ফলে পুলিশ সদস্যরা আহত হন। এসআই মোশাররফ হোসেন গুরুতর আহত হন এবং তাকে ঢাকার চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্য আহত সদস্যদের মধ্যে এসআই মেহেদী হাসান ও কনস্টেবল আবু রায়হান প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।


 **প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য:**

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের নিজস্ব সাউন্ড গ্রেনেডের নিক্ষেপের সময় পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন। কদম মোবারক এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন বলেন, "আমরা দেখি, পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডের পর আহত হন পুলিশ সদস্যরা। ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা আমরা দেখিনি।"


আন্দোলনকারী ঈশা দে বলেন, "আমাদের কেউ ককটেল ছোড়েনি। সাউন্ড গ্রেনেডের কারণেই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শতাধিক মানুষ এটা প্রত্যক্ষ করেছে।"


 **প্রতিবেদকের দৃষ্টিকোণ:**

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা যায়, পুলিশের দাবি করা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে পুলিশের নিজস্ব সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ফল। সাংবাদিক ও উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের মতে, ঘটনাস্থলে কোনো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেনি, যা পুলিশের অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।


 **পুলিশের প্রতিক্রিয়া:**

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবায়দুল হক বলেন, "পুলিশ সদস্যরা ককটেল বিস্ফোরণেই আহত হয়েছেন, সাউন্ড গ্রেনেড নয়।"


**তথ্য-প্রমাণ:**

মামলার জব্দ তালিকায় দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, ৪টি লাঠি এবং ১২টি ইটের টুকরা আলামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড ছাড়া অন্য কিছু ছোড়া হয়নি।


চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগের বিপরীতে প্রত্যক্ষদর্শীরা সাউন্ড গ্রেনেডের উল্লেখ করেছেন। ঘটনার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.