Banner

শনির আখড়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষ, মধ্যরাতেও উত্তেজনা

 **সংঘর্ষে রণক্ষেত্র শনির আখড়া, মধ্যরাতেও পাল্টাপাল্টি অবস্থান**

শনির আখড়ার মধ্যরাতের চিত্র


রাজধানীর শনির আখড়ায় কোটাবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। গভীর রাতেও সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বুধবার (১৭ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতেও সড়কে আন্দোলনকারীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।


বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাতে শনির আখড়ার কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২০ জায়গায় আগুন ধরিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।


রাত সাড়ে ১২টার দিকে শনির আখড়ার কাজলা থেকে রায়েরবাগ হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছিলেন। অপরদিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বিপুলসংখ্যক র‍্যাব পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে এই অবস্থা চলছিল। এ সময়ে শুধু অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া ওই সড়কে আর কোনো যানবাহন চলছিল না। তাতে ঢাকায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে অনেকটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়।


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে শরিক হয়ে শনির আখড়ার দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তখন থেকে দেশের ব্যস্ত এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দিনভর এমন অবস্থা চলায় সড়কে যানজট দেখা যায়। সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।


তখন থেকে বদলে যেতে থাকে শনির আখড়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কের চিত্র। আন্দোলনকারীরা মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের কাজলা অংশের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। আবার তাঁরা এক জোট হয়ে পাল্টা ধাওয়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শনির আখড়ার কাজলা থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ভয়ে বন্ধ করে দেন দোকানদাররা।


এই পরিস্থিতি চলার মধ্যে রাত ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব সদস্যকে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। পাশাপাশি সেখানে এপিবিএনের অনেক সদস্য ছিলেন। এ সময় যাত্রাবাড়ী থানার অদূরে মাছের আড়তের সামনের সড়কে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশের শটগান থেকে গুলি ছোড়ার আওয়াজ শোনা যায়। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সন্ধ্যার পর থেকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে আছেন কাজলা এলাকায়।


বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় রায়েরবাগ উড়াল পদচারী–সেতুর নিচে একদল আন্দোলনকারীকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এর কিছুটা দূরেও সড়কে আগুন জ্বলছিল। আন্দোলনকারীরা কেবল মহাসড়কের ওপর আগুন ধরাননি, তাঁরা শনির আখড়া থেকে রায়েরবাগের গলির সড়কেও আগুন ধরিয়ে দেন। এসব সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সকাল থেকে সাইনবোর্ড থেকে মানুষজন হেঁটে হেঁটে পৌঁছান যাত্রাবাড়ীতে।


এই সংঘর্ষের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই যানবাহনগুলোর যাত্রী ও চালকরা। ভোগান্তি ছাড়াও ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় ওই যানবাহনগুলোর যাত্রী ও চালকরা আতঙ্কে আছেন।


যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, বিক্ষোভকারীরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারা থানা ভবনেও ইটপাটকেল ছুঁড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পুলিশ।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.