Banner

"নৈতিক দায়িত্ববোধে অনুপ্রাণিত: মুগ্ধর জীবন ও কোটা আন্দোলনের মর্মস্পর্শী কাহিনী"

 **চোখেমুখে হাসত ছেলেটা, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সে আন্দোলনে গিয়েছিল**


# মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের জীবন কাহিনী

ছবিঃ সংগৃহীত




### ঘটনাস্থল এবং মৃত্যুর কারণ


মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র, একজন প্রতিভাবান তরুণ, যিনি গত ১৮ জুলাই উত্তরা, আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় উত্তেজনাপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল, এবং সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনায় পড়েন। মুগ্ধর পরিবার এবং তার বন্ধুদের মতে, তিনি নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের সহায়তা করছিলেন।


### পরিবার এবং যমজ ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক


মুগ্ধ ছিলেন তার যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিল দারুণ সম্পর্ক। তাদের সম্পর্কে স্নিগ্ধ বললেন, **‘মুগ্ধ তো শুধু আমার ভাই ছিল না, বন্ধু ছিল। ওর সব গোপন কথা, দুজনের মোবাইলের পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে সব তথ্য জানতাম দুজন।’** মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন, পড়াশোনা করেছেন এবং একসাথে ফ্রিল্যান্সিং করেছেন। এমনকি তাদের কাজের টেবিলের চেয়ারও এমনভাবে রাখা যে, ক্লান্ত হলে একজন আরেকজনের ঘাড়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিতেন।


### শিক্ষাজীবন ও পেশাগত জীবন


মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে স্নাতক শেষ করার পর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে প্রফেশনাল এমবিএ কোর্সে ভর্তি হন। পাশাপাশি তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সারও ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টিশীল কাজে জড়িত ছিলেন যেমন ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট এবং স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। স্কাউট সংগঠক হিসেবে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছিলেন।


### মুগ্ধর স্মৃতিসম্ভার এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা


মুগ্ধ স্মৃতি জমিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। তাঁর বড় ভাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত জানান, মুগ্ধর সংগ্রহে রাখা বিভিন্ন সনদপত্র, পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত স্মৃতি আজ তাদের পরিবারের জন্য অমূল্য হয়ে উঠেছে। মুগ্ধের স্বপ্ন ছিল সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের, এবং তার প্রিয় দেশ ছিল সুইজারল্যান্ড। তার পরিকল্পনা ছিল এমবিএ শেষ করার পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। এছাড়াও, তিন ভাই মিলে ভবিষ্যতে একটি আইটি কোম্পানি খোলার ইচ্ছাও ছিল।


### মুগ্ধর মৃত্যু এবং তার পরিবারে প্রভাব


মুগ্ধর মৃত্যু তার পরিবারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। বিশেষ করে তার যমজ ভাই স্নিগ্ধের জন্য এটি একটি অসহনীয় কষ্টের বিষয়। **‘মুগ্ধর সঙ্গে তো অনেক স্মৃতি। যমজদের মধ্যে আলাদা একটা কানেকশন থাকে। তাই একজন কষ্ট পেলে অন্যজনও কষ্ট পেত,’** বললেন স্নিগ্ধ। এই দুজন ভাইয়ের মধ্যে ছিল অদ্ভুত সংযোগ, যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতো। মুগ্ধর মৃত্যুতে স্নিগ্ধের জীবনে একটি বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে, এবং সে তার প্রিয় ভাইয়ের স্মৃতিতে প্রতিনিয়ত ভেঙে পড়ে।


### মুগ্ধর পরিবারের প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যাশা


মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, **‘চোখেমুখে হাসত ছেলেটা। কোটা আন্দোলন নিয়ে আমার অভিমত কী, তা জানতে চেয়ে সে কৌশলে আমার আর তার মায়ের কাছ থেকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সে আন্দোলনে গিয়েছিল। আল্লাহই আমার ছেলে হত্যার বিচার করবেন।’** মুগ্ধর পরিবার তার মৃত্যু নিয়ে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা মামলা করতে চায় না। বরং তারা চান ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পাক।


### শেষ কথা


মুগ্ধের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার বিশেষত তার মা শাহানা চৌধুরী এখনো মেনে নিতে পারছেন না যে তার একটি ছেলে আর নেই। মুগ্ধর মৃত্যু তার পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। তার স্মৃতি এবং ভালোবাসা সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে।


মুগ্ধর ঘটনাটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে যে, তরুণ প্রজন্মের কাছে সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ এবং সঠিক কাজ করার মানসিকতা কেমন হতে পারে। মুগ্ধর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা সর্বদা অব্যাহত থাকবে।


No comments:

Banner

Powered by Blogger.