চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেসরকারি ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার, চেক, এবং ব্যাংক গ্যারান্টি সেবা নিষিদ্ধ করেছে। এই ৯টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। এদের মধ্যে প্রথম ছয়টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।
ছবিঃ সংগৃহীত |
### **নিষেধাজ্ঞার কারণ**:
1. **চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত**:
- গত বৃহস্পতিবার বন্দরের সব বিভাগের কাছে একটি চিঠি দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ আর এই ৯টি ব্যাংকের চেক বা পে-অর্ডার গ্রহণ করবে না।
2. **ব্যাংকগুলোর আর্থিক সমস্যা**:
- নিষিদ্ধ ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
- ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের চেক লেনদেন নিষ্পত্তি করতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, যা বন্দরের আর্থিক পরিচালনায় ঝুঁকি তৈরি করছে।
- সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ব্যাংকগুলোর পে-অর্ডার ও চেক নিষিদ্ধ করেছে।
3. **সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ**:
- সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে।
- পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান থাকায় ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
4. **বন্দরের সচিবের বক্তব্য**:
- চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সাধারণত দরপত্র দাখিলের সময় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পে-অর্ডার গ্রহণ করা হয় এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া হয়।
- বন্দরের আর্থিক লেনদেনে কোনো সমস্যা এড়াতে এবং সুরক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
### **নিষেধাজ্ঞার ফলাফল ও প্রভাব**:
- **চট্টগ্রাম বন্দরে লেনদেনের উপর প্রভাব**:
- নিষেধাজ্ঞার ফলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো আর্থিক লেনদেন করা যাবে না।
- দরপত্র ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা সরাসরি প্রভাব ফেলবে, কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ আর এই ব্যাংকগুলোর চেক, পে-অর্ডার, বা ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করবে না।
- **ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন**:
- এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং তাদের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
- বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বাজারে তাদের অবস্থান সংকটাপন্ন হতে পারে।
- **বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি**:
- বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করছে এবং প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
### **সংক্ষেপে**:
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার, চেক, এবং ব্যাংক গ্যারান্টি সেবা গ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এই ব্যাংকগুলোর লেনদেন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকট নিরসনে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
No comments: