মহররম মাস ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস এবং এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এই মাসে বিশেষ করে আশুরার দিন (১০ই মহররম) অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতি বহন করে। নবীজি (সা.) মহররম মাসের বিশেষ কিছু আমল করেছেন যা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। নিচে সেগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ছবিঃ সংগৃহীত |
### মহররম মাসের গুরুত্ব
- **ইসলামী বছরের প্রথম মাস:** মহররম মাস হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল জাহেলিয়া যুগ থেকেই।
- **কুরআনুল কারীমে উল্লেখ:** আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, "নিশ্চয়ই মাসের সংখ্যা আল্লাহর নিকট বারো মাস... তাদের মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।" (সুরা তওবা: ৩৬) - এই চারটি মাসের মধ্যে মহররম একটি।
### নবীজি (সা.) এর আমলসমূহ
#### ১. রোজা রাখা
- **মহররম মাসের রোজা:** নবীজি (সা.) এই মাসে বিশেষভাবে রোজা রাখার জন্য উৎসাহ দিতেন। তিনি বলেছেন:
> “রমযানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।”
> (মুসলিম: ১১৬৩)
- **আশুরার রোজা:** নবীজি (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদেরও রোজা রাখার আদেশ দিতেন। আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে পূর্ববর্তী বছরের ছোট ছোট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। তিনি বলেন:
> “আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশা রাখি যে, এটি গত বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে।”
> (মুসলিম: ১১৬২)
- **নবীজির (সা.) নির্দেশনা:** আশুরার রোজার সাথে ৯ই মহররম অথবা ১১ই মহররম রোজা রাখা:
> “যদি আমি আগামী বছর পর্যন্ত জীবিত থাকি, তবে অবশ্যই নবম দিবসের রোজা রাখবো।”
> (মুসলিম: ১১৩৪)
তিনি আশুরার রোজাকে ইহুদিদের থেকে আলাদা করার জন্য এই অতিরিক্ত রোজার কথা বলেছিলেন।
#### ২. দান-সদকা করা
মহররম মাসে বিশেষ করে আশুরার দিন দান-সদকার গুরুত্ব রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম এই দিন বেশি বেশি দান-সদকা করতেন। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশাবাদ থাকে।
#### ৩. ইবাদত ও তওবা
- **ইবাদতের গুরুত্ব:** নবীজি (সা.) এই মাসে ইবাদত-বন্দেগি বেশি করতেন। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর স্মরণে বেশি সময় ব্যয় করতেন।
- **তওবা ও ইস্তেগফার:** মহররম মাসে অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। নবীজি (সা.) এর অনুসরণে আমাদেরও এ মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা উচিত।
### আশুরার বিশেষ তাৎপর্য
#### ১. নূহ (আ.) এর নৌকা রক্ষা
মহররম মাসের ১০ তারিখে নূহ (আ.) এর নৌকা জুদি পর্বতে থেমে গিয়েছিল। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ রহমত ছিল।
#### ২. মুসা (আ.) এর ফেরাউন থেকে মুক্তি
মহররমের ১০ তারিখে মুসা (আ.) এবং তার অনুসারীরা ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। নবীজি (সা.) বলেন:
> “এই দিন আল্লাহ মুসা (আ.) এবং তার সম্প্রদায়কে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউনকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন।”
> (বুখারি: ২০০৪)
#### ৩. হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত
মহররমের ১০ তারিখে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত ঘটেছিল। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা যা সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতি জাগ্রত করে।
### উল্লেখযোগ্য হাদিস
- **ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন:**
> “নবীজি (সা.) মদিনায় এসে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন কেন তারা এ দিন রোজা রাখছে। তারা বলল, এই দিন মুসা (আ.) এবং তার সম্প্রদায় ফেরাউনের থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমরা মুসা (আ.) এর সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখি।’ তাই নবীজি (সা.) এ দিন রোজা রাখতেন।”
> (বুখারি: ২০০৪)
- **আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত:**
> “আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন: ‘রমযানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’”
> (মুসলিম: ১১৬৩)
### উপসংহার
মহররম মাসে এবং বিশেষ করে আশুরার দিন আমাদের উচিত বেশি বেশি ইবাদত, দান-সদকা ও রোজা পালন করা। এই মাসে আমরা নবীজি (সা.) এর আমল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের আমল বৃদ্ধি করতে পারি এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও রহমত কামনা করতে পারি।
No comments: