নিম্নে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
![]() |
ছবিঃ সংগৃহীত |
### ১. সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা:
#### ১.১. **পঞ্চদশ সংশোধনীর বর্ণনা**:
- ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
- সংশোধনীতে শেখ মুজিবুর রহমানকে "জাতির পিতা" হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং সংবিধানে বিভিন্ন ধারা যোগ করা হয়, যেমন নারীদের সংরক্ষিত আসন বাড়ানো, ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহাল, এবং জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অন্তর্ভুক্ত করা।
#### ১.২. **তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল**:
- ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়, যা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
- ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে তাদেরই সরকার এ ব্যবস্থা বাতিল করে।
#### ১.৩. **আইনি বিতর্ক ও নৈতিকতা**:
- পঞ্চদশ সংশোধনী আনার সময় কোনো গণভোটের আয়োজন করা হয়নি, যা সংবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ছিল। এই কারণে সংশোধনীটি সংবিধানবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
- সংশোধনী আনার জন্য প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি বিতর্কিত রায়কে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই রায়ের আইনি ভিত্তি এবং নৈতিকতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
#### ১.৪. **রায় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি**:
- প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে পঞ্চদশ সংশোধনীর পথ সুগম করেন। যদিও হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল।
- এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় স্বতন্ত্রতা এবং জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে সমালোচকরা দাবি করেন।
#### ১.৫. **প্রভাব ও ফলাফল**:
- পঞ্চদশ সংশোধনী আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতাকে আইনি বৈধতা দেয় এবং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
### ২. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা:
#### ২.১. **হাইকোর্টের রুল**:
- সম্প্রতি হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে একটি রুল জারি করেছেন, যেখানে সংশোধনীটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই রুলটি পঞ্চদশ সংশোধনী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
#### ২.২. **সংবিধানের ব্যাখ্যা**:
- সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একাধিক অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের জন্য গণভোটের প্রয়োজন। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় এই গণভোট করা হয়নি। এটি সংশোধনীর আইনি বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
- ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হলেও, আদালতের রায়ে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার কথা ছিল। এই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়, যা আইনের শাসনের পরিপন্থী।
#### ২.৩. **আদালতের সিদ্ধান্তের প্রভাব**:
- যদি হাইকোর্টের রুল চূড়ান্তভাবে পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এর ফলে ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া আগের মতো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ফিরে আসতে পারে।
- এ সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
#### ২.৪. **রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা**:
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপিত হলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। এতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হতে পারে, যা সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।
#### ২.৫. **অভিযোগ ও সমালোচনা**:
- পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আইনজ্ঞ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। তারা মনে করেন, এই সংশোধনী গণতন্ত্র এবং সংবিধানের মূল কাঠামোকে ক্ষুণ্ন করেছে।
- পঞ্চদশ সংশোধনী আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা স্থায়ী করার একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
No comments: