গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে হামাসের প্রতিনিধিদল মিসরের রাজধানী কায়রোতে পৌঁছেছে। তবে দলটি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। কায়রোতে মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের লাগাতার হামলা এবং হিজবুল্লাহর প্রতিশোধমূলক ড্রোন হামলার মধ্যে এই আলোচনা চলছে।
ছবিঃ সংগৃহীত |
### **যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রেক্ষাপট:**
গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত থামাতে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, এবং কাতার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে গাজা ও মিসর সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের সম্ভাব্য স্থায়ী উপস্থিতি আলোচনার বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর আগে হওয়া যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনা কার্যত সফল হয়নি।
### **হামাসের প্রতিনিধিদল:**
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, তারা একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে পাঠিয়েছে, তবে এই দলটি যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেবে না। বরং এই দলটি মিসরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনা প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়ে জানবে। শনিবার সন্ধ্যায় কায়রোতে পৌঁছায় এই প্রতিনিধিদল।
হামাসের একজন নেতা বলেন, প্রতিনিধিদলকে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করা হবে, তবে তারা আলোচনায় সরাসরি অংশ নেবে না। বরং তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়ে জোর দেবে, বিশেষ করে ফিলাডেলফি নামে পরিচিত মিসরের সীমান্ত করিডর থেকে।
### **মার্কিন পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া:**
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে যুদ্ধবিরতির একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন, যা ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুযায়ী তৈরি। হামাসের আরেক নেতা জানিয়েছেন, হামাসের নেতারা ইতিমধ্যে বাইডেনের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন এবং তারা কোনো পরিবর্তন ছাড়াই এটি বাস্তবায়ন করতে চায়। বাইডেন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের অনুমোদিত এই তিন ধাপের পরিকল্পনার মধ্যে ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
### **ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া:**
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে গাজার সীমান্তে সেনা মোতায়েনের পক্ষে কথা বলে আসছেন। তার দাবি, মিসর থেকে হামাসের জন্য অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ করতে সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন রাখা অপরিহার্য।
### **গাজার বর্তমান পরিস্থিতি:**
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলার সময়ও গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে, যেখানে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক সংঘাত চলছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি হামলায় চার শিশুসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় সংঘাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।
### **মানবিক সংকট ও হিজবুল্লাহর হামলা:**
ইসরায়েলের নির্দেশে দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিস থেকে হাজার হাজার মানুষ অন্যত্র সরে গেছে। এই নতুন করে বাস্তুচ্যুতি মানবিক সংকটের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের ইয়ারা এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি স্থাপনায় আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
### **মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা:**
কায়রোতে গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান উইলিয়াম বার্নস, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানরা অংশ নিচ্ছেন। যুদ্ধবিরতির আলোচনা সম্পর্কে অবগত একটি মিসরীয় সূত্র জানায়, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও আলোচনা জটিলতর হচ্ছে, তবুও রবিবারের বর্ধিত আলোচনাটি একটি চুক্তি প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন যদি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চাপ দিতে পারে, তবে শিগগিরই একটি চুক্তি ঘোষণা করা হতে পারে।
No comments: