Banner

**রূপপুর প্রকল্পে ঘুষের অভিযোগ: রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের 'গুজব' মন্তব্য ও প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন**

 রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যা গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অভিযোগগুলোকে ‘গুজব’ এবং ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্যের সত্যতা ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করার জন্য কয়েকটি দিক বিবেচনা করা জরুরি:

ছবিঃ সংগৃহীত

### ১. **রূপপুর প্রকল্পের পটভূমি:**

   - রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বড় পরিসরের যৌথ উদ্যোগ, যা বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

   - রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রসাটম এই প্রকল্পের মূল ঠিকাদার, এবং প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


### ২. **ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ:**

   - বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে রূপপুর প্রকল্পে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের নির্দিষ্ট পর্যায়ে উচ্চমূল্যের বিনিময়ে কিছু কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তোলে।

   - এসব অভিযোগ বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং প্রকল্পের পরিচালনা ও তদারকির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


### ৩. **রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া:**

   - রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে এসব অভিযোগকে ‘গুজব’ এবং ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, রূপপুর প্রকল্প একটি স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হচ্ছে, এবং এতে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা ঘুষের ঘটনা ঘটেনি।

   - তিনি এই অভিযোগগুলোকে প্রকল্পের সাফল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেন।


### ৪. **বক্তব্যের সত্যতা যাচাই:**

   - রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে হলে প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম, ঠিকাদারী কার্যক্রম, এবং আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা পরীক্ষা করতে হবে।

   - বাংলাদেশ ও রাশিয়া উভয়ের সরকার এই প্রকল্পের উপর তদারকি চালিয়ে আসছে। তবে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে যে অভিযোগগুলো উঠেছে, সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

   - যদি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সত্য হয়, তবে এই অভিযোগগুলো তদন্তের মাধ্যমে খারিজ করা উচিত এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও কার্যক্রমের সঠিকতা সম্পর্কে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করতে হবে।


### ৫. **অভিযোগ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা:**

   - রূপপুর প্রকল্পের মতো বড় মাপের একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এই ধরনের অভিযোগ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এবং দেশের জন্য এর সুবিধার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

   - সরকার বা স্বাধীন তদন্ত সংস্থার উচিত প্রকল্পের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অভিযোগের সঠিকতা যাচাই করা।

   - যদি প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে, কোনো প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করলে প্রকল্পের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।


### ৬. **সামগ্রিক পর্যালোচনা:**

   - রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য যে প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তা একপেশে হতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে অভিযোগগুলো একেবারেই মিথ্যা।

   - উভয় দেশের দায়িত্ব হচ্ছে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং যে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা গুজবকে প্রতিরোধ করা।

   - প্রকল্পের সাফল্য এবং এর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষের যৌথভাবে কাজ করা উচিত।


### সারসংক্ষেপ:

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রূপপুর প্রকল্পে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগকে ‘গুজব’ এবং ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই ধরনের মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য স্বাধীন তদন্ত ও প্রকল্পের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রকল্পের সাফল্য ও ভাবমূর্তি রক্ষায় উভয় দেশের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সকল প্রকার অভিযোগের সঠিকভাবে তদন্ত করা এবং প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.