নূর নবী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক, সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে ডিবি কার্যালয়ে নির্মম নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দ্বারা গ্রেপ্তার হন। তার অভিযোগ অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর তাকে গাড়িতে তুলে নির্যাতন শুরু করা হয়।
ছবিঃ সংগৃহীত |
**গ্রেপ্তারের বিস্তারিত:**
নূর নবী জানান, তাকে গ্রেপ্তারের সময় ডিবি পুলিশ বিশেষ করে সহকারী কমিশনার গোলাম মোস্তফা এবং তার দলের সদস্যরা গাড়িতে তুলে মারধর শুরু করেন। গাড়িতে তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয় এবং তিনি ভেবেছিলেন যে এই অবস্থার চেয়ে আরও খারাপ কিছু হবে না। কিন্তু ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পরিমাণ আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
**ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতন:**
ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেলে তাকে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। প্রথমে চেয়ারে বসিয়ে তার শরীরের সব কাপড় খুলে ফেলা হয় এবং চিৎ করে শুইয়ে দেয়। এরপর তার নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেওয়া হয়, যা তাকে অত্যন্ত যন্ত্রণা দেয়। নূর নবী জানান, পেটানোর সময় তাকে বলা হতো, “তোকে মেরেই ফেলব।” ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবে মারধর করা হয়, যা তার পায়ের অংশ পচে যাওয়ার বা কেটে ফেলার আশঙ্কা তৈরি করে।
**মামলা সাজানোর চেষ্টা:**
নূর নবী অভিযোগ করেন, তার আন্দোলনের ব্যাপারে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার রেকর্ড শুনিয়ে তাকে মারধর করা হয়। এছাড়া, তার পকেটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির কার্ড দেখে তাকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাকে বলাপূর্বক পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিয়ে ভিডিও করার চেষ্টা করা হয়, যাতে পরে সাজানো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়।
**কারাগারে অবস্থান:**
কারাগারে অবস্থানকালে, নূর নবী বলেন যে, তাকে পানির মধ্যে মরিচ মিশিয়ে রাখা হয় যাতে সে পানি খেতে না পারে এবং গোসল করতে না পারে। এছাড়া, কারাগারের গার্ডদের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঁদলেও তার কথা শোনেনি।
**মুক্তি:**
সম্প্রতি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।” তার এই বক্তব্যে তিনি একটি স্বাধীন দেশে ফেরার আনন্দ প্রকাশ করেন।
ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে ডিবির পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
No comments: