শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর তাঁর ভারতে অবস্থান এবং সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। প্রতিটি বিষয় বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:
ছবিঃ সংগৃহীত |
### ১. **কূটনৈতিক পাসপোর্টের বাতিলকরণ**
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। কূটনৈতিক পাসপোর্ট এমন একটি বিশেষ পাসপোর্ট যা সরকারী কর্মকর্তাদের, বিশেষত মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ইস্যু করা হয়। এটি ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ এবং কিছু বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু এই পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর, শেখ হাসিনার অন্য কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই। অর্থাৎ, তাঁর এখন অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ বা বর্তমান অবস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
### ২. **ভারতে অবস্থান ও বৈধতা**
শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন, যেখানে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্টের সুবিধার আওতায় ৪৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারেন। এটি ভারতের ভিসা নীতির একটি অংশ যেখানে কূটনৈতিক বা সরকারি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায়, তাঁকে ৪৫ দিন পর ভারতে বৈধভাবে থাকার উপায় খুঁজতে হবে, নতুবা এই সময়সীমা অতিক্রম করলে তাঁর অবৈধভাবে অবস্থানের ঝুঁকি তৈরি হবে।
### ৩. **প্রত্যর্পণের ঝুঁকি ও আইনি জটিলতা**
বাংলাদেশের সরকার যদি ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ করে, তবে তা ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে পর্যালোচনা করা হবে। ২০১৩ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে সংশোধিত এই চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো ব্যক্তি যাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৫১টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৪২টি হত্যা মামলা। এসব মামলার ভিত্তিতে তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হতে পারে।
### ৪. **প্রত্যর্পণ চুক্তির শর্তাবলী**
প্রত্যর্পণ চুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী রয়েছে যা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে:
- **রাজনৈতিক উদ্দেশ্য:** যদি মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে ভারত সরকার এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বিবেচনা করে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করতে পারে। তবে, হত্যার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে এই ধরনের মামলাকে রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
- **ন্যায়বিচারের শর্ত:** যদি মামলাগুলো ন্যায়বিচারের স্বার্থে সৎ উদ্দেশ্যে না করা হয়, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য হতে পারে যদি প্রমাণিত হয় যে মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
### ৫. **পরবর্তী পদক্ষেপ ও সংকট**
শেখ হাসিনা যদি ভারতের আইন অনুযায়ী থাকার নিয়ম মেনে চলতে চান, তবে তাঁকে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। সাধারণ পাসপোর্ট পেতে তাঁকে কমপক্ষে দুটি তদন্ত সংস্থার ছাড়পত্র পেতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল হতে পারে। যদি তাঁকে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া না হয়, তবে তিনি অবৈধভাবে ভারতে থাকতে পারেন, যা ভারতের আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
শেখ হাসিনার এই পরিস্থিতি তাঁকে গভীর রাজনৈতিক এবং আইনি সংকটে ফেলেছে, এবং এটি তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
No comments: