Banner

"নির্বাচনে অংশ নেবেন না ড. ইউনূস: ক্ষমতা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই"

 **নির্বাচন ও রাজনীতিতে ড. ইউনূসের অবস্থান: 'আমি নির্বাচন করব না'**

ছবিঃ সংগৃহীত


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত ‘ক্লাইমেট-ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার নিজস্ব ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।


### নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে স্পষ্ট মন্তব্য


অনুষ্ঠানের শেষ অংশে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, “আমাকে দেখে কি আপনার মনে হয় আমি নির্বাচন করব? আমি নির্বাচন করব না।” সঞ্চালক তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, “তাহলে আপনার নির্বাচন করার কোনো সম্ভাবনাই নেই?” ড. ইউনূস তার আগের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “না, না কোনোভাবেই নয়।” এর মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা নেই।


### শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ও বিচার প্রসঙ্গ


অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচার করার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস বলেন, “কেন নয়। যদি তিনি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে অবশ্যই ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।” তার মতে, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত এবং অপরাধ করে থাকলে যে কেউকেই বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।


### নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা


নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, সাবেক সরকার বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সুশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব ব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশনগুলোর কাজ হবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ প্রদান, যাতে দেশের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়। কমিশনগুলোকে তিন মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 


ড. ইউনূস জানান, কমিশনগুলোর সুপারিশ প্রাপ্তির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রক্রিয়াটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য তারা কাজ করছেন।


### ক্ষমতাচ্যুত দলের অভিযোগ


আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা অস্বীকার করেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে তারা নিজেদের স্বার্থেই গেছে। যারা দেশে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তার মতে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যা যা করা দরকার, সরকার তা-ই করছে।


### জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ড. ইউনূসের উদ্বেগ


অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্যারিস চুক্তি কার্যকর করার জন্য মৌলিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন অপরিহার্য। 


তিনি বলেন, “আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তা এই গ্রহ ধ্বংসের মূল কারণ। ধনী দেশগুলোর সৃষ্টি করা জলবায়ু বিপর্যয়ের বোঝা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।” তার মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি ধনী দেশগুলোর আরও বেশি দায়িত্ব পালন করা উচিত।


### উপসংহার


ড. ইউনূসের এই বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তার অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। নির্বাচন এবং ক্ষমতায় অংশগ্রহণের বিষয়টি তিনি পরিস্কারভাবে নাকচ করলেও, দেশের শাসনব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে তার আন্তরিকতা প্রমাণিত।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.