**স্বেচ্ছাচারিতার ছায়ায় আওয়ামী লীগের দুর্নীতির উত্থান
স্বেচ্ছাচারিতার ছায়ায় আওয়ামী লীগের দুর্নীতির উত্থান" |
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতি ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে শান্তি, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও, তাদের সরকারের অধীনে দুর্নীতির প্রকোপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে এই দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে। এই প্রবন্ধে, আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতার ছায়ায় দুর্নীতির উত্থানের বিভিন্ন কারণ এবং তাদের পরিণতি বিশ্লেষণ করা হবে।
#### ১. **ক্ষমতার অপব্যবহার:**
ক্ষমতার অপব্যবহার একটি মৌলিক সমস্যা যা আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রকট হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল যখন নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, তখন তা সরকারের নৈতিকতা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করে। নেতাকর্মীরা প্রভাবশালী পদে নিযুক্ত হয়ে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য প্রশাসনিক কাজকর্মে প্রভাব বিস্তার করে, যা দুর্নীতির জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি প্রকল্পগুলিতে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সরকারি সম্পদ অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
#### ২. **রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা:**
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দুর্নীতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, দলীয় নেতাদের সংযোগের কারণে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করেছেন। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে এর সুবিধা নিয়ে থাকেন।
#### ৩. **প্রশাসনিক দুর্বলতা:**
প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে। দলীয় প্রভাবের কারণে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। প্রশাসনিক দুর্বলতার ফলে, নিয়ম-কানুন ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়, যা দুর্নীতির প্রসার ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, প্রজেক্ট বাস্তবায়নে দুর্নীতি এবং সরকারি সম্পদ ব্যবহারে স্বেচ্ছাচারিতার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
#### ৪. **জবাবদিহিতার অভাব:**
জবাবদিহিতার অভাব এবং দলীয় শৃঙ্খলার অভাবে দুর্নীতির প্রকোপ বেড়ে যায়। দলের নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। দলের নীতি ও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠিত কমিটি এবং উদ্যোগগুলো প্রভাবশালী দলের স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
#### ৫. **সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা:**
সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং সীমাবদ্ধতা দুর্নীতি প্রকাশ ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সরকারের নিয়ন্ত্রণের কারণে, অনেক সময় দুর্নীতির প্রতিবেদন, অনুসন্ধান এবং সুষ্ঠু বিচার মঞ্চস্থ হতে পারে না। স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমত গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে।
#### ৬. **দুর্বল বিচার ব্যবস্থা:**
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের ফলে দুর্নীতি দমন কার্যকরভাবে করা সম্ভব হয় না। রাজনৈতিক প্রভাব বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করে এবং দুর্নীতির মামলাগুলি সঠিকভাবে তদন্ত এবং শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্নীতির শিকার ব্যক্তিরা অনেক সময় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয় এবং অপরাধীরা শাস্তি থেকে মুক্তি পায়।
#### ৭. **নীতি ও প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা:**
আওয়ামী লীগের নীতি ও প্রতিশ্রুতির মধ্যে “শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন” এর মতো মুখস্থ নীতিগুলি থাকলেও বাস্তবে তাদের প্রয়োগে বড় ধরনের ব্যর্থতা ঘটেছে। সরকারী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই পরিস্থিতি সরকারের নৈতিকতা এবং দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
### **উপসংহার:**
স্বেচ্ছাচারিতার ছায়ায় আওয়ামী লীগের দুর্নীতির উত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, এবং বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দুর্নীতির প্রকোপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারকে অবশ্যই স্বচ্ছতার সংস্কৃতি স্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।
No comments: