**শেখ হাসিনার পতন: ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নাহিদ ইসলামের অভ্যুত্থান ও নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়**
ছবিঃ সংগৃহীত
নাহিদ ইসলাম একজন তরুণ নেতা হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করেছেন। তার নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশব্যাপী এক গণ আন্দোলনে রূপ নেয়, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
**পটভূমি ও ছাত্র আন্দোলনের সূচনা:**
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক নাহিদ ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া প্রতিবাদে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তবে সে সময়ে সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিলেও ২০২৩ সালের আন্দোলনটি ছিল অনেক বড় আকারের ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আদালত বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার পর, নাহিদ ও তার সহযোদ্ধারা সকলের জন্য সমান সুযোগের দাবি তোলেন। যখন আন্দোলনকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায় এবং আবু সাঈদ নামে এক ছাত্রনেতার মৃত্যু হয়, সেটি হয়ে ওঠে গেম-চেঞ্জিং মুহূর্ত।
**আন্দোলন থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে:**
আন্দোলনকারীদের এই প্রতিবাদ দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এবং স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে একটি গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ৩ আগস্ট ছাত্ররা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি তুলে। লাখো মানুষ ঢাকায় শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে তিনি হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান।
শেখ হাসিনার নির্বাসন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন:
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর, সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ছাত্ররা ৮৪ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করে, যিনি আগে আইনি অভিযোগের কারণে নির্বাসিত ছিলেন। নাহিদ ইসলামকে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
**নাহিদ ইসলামের অভিজ্ঞতা:**
নাহিদ ইসলাম এর আগে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক ছিলেন। আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তাকে আত্মগোপন করতে হয়। তাকে তুলে নেওয়া হয় এবং নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তিনি একটি ব্রিজের পাশে পড়ে ছিলেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে। এরপর থেকেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
**সামনের চ্যালেঞ্জ:**
নাহিদ ইসলামের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করা। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সামরিক বাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সহিংসতার মোকাবিলা করাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ একটি ভয় এবং দমনপীড়নের রাজনীতি দেখেছে। এখন দেশ এক নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে। তবে তা ধরে রাখতে এবং গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার কাজটা খুব সহজ হবে না।
**উপসংহার:**
নাহিদ ইসলাম বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার নেতৃত্বে ও ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয় এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও আশা পূরণের জন্য এই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
No comments: