**জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যেকোনো বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই: নাহিদ ইসলাম
ছবিঃ সংগৃহীত |
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ জন্য জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে এমন যেকোনো বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিস কক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন।
সাক্ষাতের শুরুতেই হেলেন লাফেভ নাহিদ ইসলামকে নতুন দায়িত্ব নেওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং তাকে প্রশ্ন করেন, ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের অংশ হওয়ার পর তার দৃষ্টিভঙ্গির কী পরিবর্তন হয়েছে। নাহিদ ইসলাম জবাবে বলেন, "দৃষ্টিভঙ্গি একই রয়েছে, কেবল কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। আমরা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করছি।"
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টার কাছে তার দুই মন্ত্রণালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় দুটির প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তাবনা তৈরি করে কাজ করা হচ্ছে।
হেলেন লাফেভ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাইবার সিকিউরিটি আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমরা অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। বিগত বছরগুলোতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নিচের দিকে ছিল। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং কোনো আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না।"
তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রাসঙ্গিকতাও দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করা সম্ভব হবে।
হেলেন লাফেভ সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অসন্তোষের বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, "ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অসন্তোষ আছে, কারণ বেতন কাঠামো কম হওয়ায় তরুণরা সাংবাদিকতার পেশায় আকর্ষণ হারাচ্ছে। এ জন্য ওয়েজ বোর্ড সংস্কারের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।"
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের চলমান যৌথ প্রকল্প অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন কোনো সৃজনশীল প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তা করার কথাও জানান নাহিদ ইসলাম।
পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন ইবেলি মিডিয়া হাউসের অভ্যন্তরে রাজনীতি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সাংবাদিকরা যদি এ বিষয়ে সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসেন, তাহলে আমরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।"
নাহিদ ইসলাম পিআইবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ, এবং সিটিজেন জার্নালিস্টদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার কথাও উল্লেখ করেন।
কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে যখন মার্কিন কোম্পানির বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চান, তখন নাহিদ ইসলাম বলেন, "জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যেকোনো বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই।" পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলোর ডাটা সেন্টার ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশে স্থাপনেরও অনুরোধ জানান।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে পারস্পরিক অংশীদারি ও সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান সম্পর্কে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে অবহিত করেন।
বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, দূতাবাসের পলিটিক্যাল-ইকোনমিক কাউন্সেলর এরিখ জিলান, মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর জন ফে, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন ইবেলি, এবং প্রটোকল সুপারভাইজার নিশাত তাসনিম উপস্থিত ছিলেন।
No comments: