**গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত: বিস্তারিত আলোচনা
![]() |
ছবিঃ সংগৃহীত |
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণভবনকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
#### সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট এবং কারণ
গণভবন, যা অতীতে সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো, এবার জনগণের আন্দোলনের ফলে ইতিহাসের এক নতুন পরিচিতি পেতে যাচ্ছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন কখনোই সাধারণ জনগণের ভবন হয়ে উঠতে পারেনি, তবে এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার সময় এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, গণভবনকে "জুলাই স্মৃতি জাদুঘর" হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে।
#### ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ কীভাবে গড়ে তোলা হবে
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গণভবনকে যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার সময় এর বর্তমান অবস্থা অপরিবর্তিত রাখা হবে। এর অর্থ হলো, ভবনটির ভৌত অবকাঠামোতে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হবে না। ভবনটি যেভাবে জনগণ ছেড়ে গেছে, সেভাবেই এটি থাকবে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, এই যাদুঘরে বিশেষভাবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি, শহীদদের স্মৃতি এবং পূর্ববর্তী সরকারের আমলের অন্যায়-অবিচার, নির্যাতন, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিপত্র সংরক্ষিত থাকবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি ইতিহাস শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে, যেখানে তারা জানতে পারবে কীভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে।
#### গণভবন জনগণের ভবন হিসেবে উন্মুক্তকরণ
গণভবনকে জনগণের ভবন হিসেবে উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে জনগণ এবং ছাত্রদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন জনগণের ভবন হয়ে উঠতে পারেনি; এটি একসময় শুধুমাত্র ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন সময় এসেছে, জনগণের ভবন হিসেবে গণভবনকে পুনঃস্থাপন করা।
#### ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান
গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ঘটে, যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর ছাত্র-জনতা গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখল করে তাদের বিজয় উল্লাস প্রকাশ করে। এই ঐতিহাসিক ঘটনা গণভবনের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করে এবং সরকারের ক্ষমতার পরিবর্তনের সূচনা করে।
#### ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য প্রভাব
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শীঘ্রই "জুলাই স্মৃতি জাদুঘর" প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করবে। এই যাদুঘর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি জাতি তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সংরক্ষণ করতে পারবে। পাশাপাশি, এটি মানুষের সংগ্রামের একটি প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি পাবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
এই উদ্যোগটি সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা জনমতকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং গণতন্ত্রের পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হতে সহায়তা করতে পারে।
No comments: