ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগের রাত: হাসিনার শেষ বৈঠক এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
![]() |
ছবিঃ সংগৃহীত |
২০২৪ সালের ৪ঠা আগস্টের রাত। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে একাধিক নেতা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি ছিল সংকটময় মুহূর্তে গৃহীত একটি গোপন এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে কোটি কোটি টাকা বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পাঁচজন নেতা ও কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং একজন লেফটেনেন্ট জেনারেল অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এছাড়াও, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বৈঠকে যোগ দেন।
### পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
শেখ হাসিনা বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঘোষণা করেন, "আর অপেক্ষা নয়, আর আপস নয়।" এরপর তিনি নির্দেশ দেন যে, "নির্বিচারে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে হবে।" আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে—গোলাবারুদের সংকট এবং জন-উপস্থিতির চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর জবাবে, হাসিনা পুলিশের প্রশংসা করলেও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, "তোমাদের দিয়ে কিছু হবে না। আমি সেনাবাহিনীকে বলবো গুলি করতে। কারফিউ আরও কঠিন করতে।"
তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল যে, তারা কোনো অবস্থাতেই গুলি চালাবে না। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, "মার্শাল ল’ দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে, এবং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিও এর পক্ষে নয়।" এই বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও ক্ষুব্ধ হন এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি তোমাদের জন্য কী না করেছি! তোমরা এখন সবাই গা বাঁচানোর চেষ্টা করছো। যা করার আমিই করবো।"
### টাকার বিতরণ ও পালানোর প্রস্তুতি
বৈঠকের এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আন্দোলনকে বিপথগামী করতে কোটি কোটি টাকা ছড়ানো হবে। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, এই টাকার একটি বড় অংশ তখনই গণভবনে গচ্ছিত ছিল। সেই রাতে টাকা বিলি-বণ্টন করা হয় এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হয়। এরপরের দিন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে পালিয়ে যান।
### গণভবনে লুট এবং টাকার রহস্য
শেখ হাসিনার পালানোর পর, গণভবনে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। লুটকারীরা টাকাও নিয়ে যায়। তবে ঠিক কত কোটি টাকা ছিল, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। পরবর্তীতে পঞ্চান্ন লাখ টাকা উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা তা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তবে বাকী টাকার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
### পরিস্থিতির বিশ্লেষণ ও ষড়যন্ত্রের ধারণা
এই বৈঠক এবং তার পরবর্তী ঘটনার বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে, একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টাকা ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকে দমন এবং বিপথগামী করতে নেতাদের কাছে অর্থ বিতরণ করা হয়। তবে এই ষড়যন্ত্র কতটা সফল হয়েছিল এবং এর পেছনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, এই বৈঠক ও ষড়যন্ত্র দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় নিয়ে আসে, যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয় এবং দেশজুড়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।
No comments: