Banner

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকার লোপাট মামলা

 **মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই: ২৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের মামলা দায়ের**


মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও বিশাল অর্থ লোপাটের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সাবেক প্রবাসী সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ ১০৩ জন সিন্ডিকেট সদস্যের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন মডেল থানায় মানবপাচার আইনে (২০১২) মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন পটুয়াখালী জেলার কোটখালী গ্রামের আলতাব খান, যিনি একটি রিক্রুটিং এজেন্সি 'আফিয়া ওভারসীজ' এর প্রোপাইটর।


### **সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ ও অভিযোগের বিবরণ**

Syndicates in the Malaysian labor market ছবিঃ সংগৃহীত


২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়, সিন্ডিকেটটি প্রতিটি কর্মীর কাছ থেকে ৪.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আদায় করেছে, যা সরকার নির্ধারিত ভিসা প্রসেসিং খরচের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু ভিসা প্রসেসিংয়ের খাতেই সিন্ডিকেট চক্রের গডফাদার রুহুল আমিন স্বপনের কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। কর্মীদের মধ্যে অনেকেই তাদের জমাকৃত টাকা ফেরত পাননি, বিশেষ করে যখন দেশটিতে কর্মী নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।


মামলার এজাহারে বলা হয়, সিন্ডিকেট চক্রটি একটি মানবপাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে কাজ করছে। তারা বিদেশগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে। মামলার বিবরণে সাবেক প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনকে প্রথম এবং দ্বিতীয় আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন রুহুল আমিন (স্বপন), সাবেক এমপি মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদ, নিজাম হাজারি, মোহাম্মদ নুর আলী এবং আরো ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক।


### **মামলার প্রেক্ষাপট এবং প্রতিক্রিয়া**


মামলার বাদী আলতাব খান তার এজাহারে উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ মাফিয়া সিন্ডিকেট চক্র। এই চক্রটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বেআইনি সম্পদ অর্জন করেছে। আলতাব খান তার অফিসে হুমকি পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। 


বায়রার সাবেক ইসি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, রুহুল আমিন স্বপন মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে লাখ লাখ কর্মীর কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং জনশক্তি রপ্তানি খাতকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, রুহুল আমিন স্বপন এখন সৌদি আরব, আমিরাত, এবং লিবিয়ার মতো বড় শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করার জন্য পরিকল্পনা করছেন।


### **আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ এবং দাবি**


বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রবাসী উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের জমাকৃত টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন। বায়রার সাবেক শীর্ষ নেতা মো. নূরুল আমিন বলেন, মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চক্র হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, সিন্ডিকেটের লাইসেন্স বাতিল করে পাচারকৃত অর্থ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।


### **আইনগত লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ**


এই মামলার মাধ্যমে একটি বড় ধাক্কা এসেছে মানবপাচার ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। প্রবাসী উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং যারা তাদের সাথে প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


### **উপসংহার**


মালয়েশিয়া শ্রমবাজারের এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে রক্ষা করার জন্য সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। মামলা ও তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের সিন্ডিকেট চক্রের কার্যকলাপে লাগাম টানতে সহায়ক হবে।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.