ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মুক্ত এস আলমের কবল থেকে: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়। এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের অধীনে পরিচালিত হবে, যা এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, এবং পরিচালনায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনার আশা জাগায়।
ছবিঃ প্রতীকী (সংগৃহীত) |
**নতুন পর্ষদের গঠন:**
নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, যিনি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ছিলেন এবং ব্যাংকিং খাতে অভিজ্ঞতার জন্য পরিচিত। পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন:
1. **মো. আজিজুর রহমান:** বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক, যিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এবং ব্যাংকিং খাতের গভীর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
2. **মো. আব্দুল কুদ্দুছ:** উত্তরা ব্যাংক পিএলসির সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, যিনি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন।
3. **ড. মো. সাইফুল আলম:** ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক। তার একাডেমিক ও পেশাগত অভিজ্ঞতা ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং শাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
4. **রাগিব আহসান:** একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, যিনি আর্থিক বিশ্লেষণ এবং নিরীক্ষণক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং যিনি ব্যাংকের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন।
**পরিস্থিতির পটভূমি:**
এর আগে, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি ব্যাংকও তাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়। ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এবং ন্যাশনাল ব্যাংক সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এস আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপনার অধীনে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর পেছনে মূলত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, স্বচ্ছতা ও শাসন প্রক্রিয়ার ঘাটতি এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগগুলো ছিল।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার ফলে এই ব্যাংকগুলো এখন স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদের অধীনে পরিচালিত হবে। ব্যাংকিং খাতে এমন পদক্ষেপ এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশজুড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।
**প্রভাব ও সম্ভাবনা:**
এই পরিবর্তনগুলোর কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন নেতৃত্ব এবং ব্যবস্থাপনার কাঠামো তৈরি হচ্ছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে যে এই পরিবর্তনগুলোর ফলে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং আর্থিক খাতের সামগ্রিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
এই পদক্ষেপ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাসন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
No comments: