**গাজা ও লেবানন সংকটে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের সতর্কবার্তা**
ছবিঃ সংগৃহীত |
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বিশ্বনেতারা জাতিসংঘে একত্রিত হয়ে লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যে সম্ভাব্য ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে লেবাননে ইসরাইলি হামলা এবং গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে 'খাদের কিনারায়' বলে উল্লেখ করেছেন এবং সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
### **সংঘাতের প্রেক্ষাপট:**
২০২৩ সাল থেকে ইসরাইল ও গাজার মধ্যে চলমান সহিংসতা, যার মধ্যে ইসরাইলের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান, পরিস্থিতিকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে। এই সংঘাতের মাঝে লেবাননের সীমান্ত অঞ্চলেও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। লেবাননের সরকারি তথ্যমতে, ইসরাইলি হামলায় ৫৫৮ জন লেবানিজ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫০ জন শিশু। এই সংঘাতে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
### **বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া:**
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বিদায়ী ভাষণে বলেন, "সর্বাত্মক যুদ্ধ কারও স্বার্থে নয়। এখনও কূটনৈতিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।" তিনি দুই দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তবে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব বাইডেনের এই বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে জানান, এতে লেবাননের সংকটের সমাধান নিয়ে কোনো কার্যকর প্রতিশ্রুতি নেই।
### **মধ্যস্থতা ও সমাধানের চেষ্টা:**
কাতার গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইসরাইলকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য দায়ী করছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘যুদ্ধ ছড়ানোর জন্য দায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “গাজায় কেবল শিশুরাই মারা যাচ্ছে না, জাতিসংঘের নেওয়া ব্যবস্থাও ব্যর্থ হচ্ছে।” ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে থাকলেও বেসামরিক লোকদের ওপর শাস্তি প্রয়োগের বিরোধিতা করেন।
### **ইসরাইলের অবস্থান:**
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন জানান, লেবাননে স্থল অভিযানের ব্যাপারে ইসরাইলের কোনো আগ্রহ নেই। তারা চায় না যে, তাদের সৈন্যরা বিদেশে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক। তবে এ ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট নয় যে, ইসরাইল গাজার বোমাবর্ষণ বন্ধ করবে কিনা বা লেবাননে উত্তেজনা কমাতে কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা।
### **ভবিষ্যৎ সংকট ও সম্ভাবনা:**
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস আরও বলেন, লেবাননের পরিস্থিতি গাজার মতোই আরেকটি যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলের নীতির সমালোচনা করেন এবং জাতিসংঘের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি লেবাননে চলমান সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।
### **উপসংহার:**
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ এবং আলোচনার প্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে, তারা সংঘাতময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় একত্রিত হলেও তা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। লেবানন ও গাজার পরিস্থিতি বর্তমানে একটি সংকটপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে যদি না কূটনৈতিকভাবে সংকটের সমাধান খোঁজা হয়। জাতিসংঘের সক্রিয় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগই পারে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে।
No comments: