**১৫ বছর সময় পেলে শেখ মুজিব হাসিনাকেও ছাড়িয়ে যেতেন: মাহমুদুর রহমান**
ছবিঃ সংগৃহীত |
শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, এবং তার সমালোচনাগুলো আজও সমসাময়িক আলোচনার অংশ। মাহমুদুর রহমান ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে কিছু গুরুতর দাবি উত্থাপন করেছেন।
#### **শেখ মুজিবের শাসনকাল নিয়ে সমালোচনা**
- **গণতন্ত্রের অবসান ও বাকশাল প্রতিষ্ঠা**
- **মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধী কণ্ঠ রোধ**
- **রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে বিচার বহির্ভূত হত্যা**
- **দুর্ভিক্ষ ও শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা**
#### **শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে তুলনা**
- **স্বৈরতান্ত্রিক নীতির অনুসরণ**
- **গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ**
- **বিরোধী মত দমন ও জঙ্গিবাদের ব্যবহার**
#### **গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা**
- **ফ্যাসিবাদী বয়ান প্রচারে মিডিয়ার সহযোগিতা**
- **ইসলামফোবিয়া ছড়াতে জঙ্গি কার্ডের অপব্যবহার**
- **হেফাজতের ওপর দমন-পীড়নে মিডিয়ার ন্যায্যতা প্রদান**
#### **নির্মোহ গবেষণার আহ্বান**
- **গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অনুসন্ধানের তাগিদ**
- **পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদচর্চার ইতিহাস রিভিউ করার আহ্বান**
### **মাহমুদুর রহমানের মন্তব্যের মূল বিষয়বস্তু**
তিনি দাবি করেছেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব গণতন্ত্র ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদী শাসনের বীজ বপন করেছিলেন। তার মতে, শেখ মুজিব যদি ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতেন, তাহলে তার শাসন শেখ হাসিনার শাসনকালকেও ছাড়িয়ে যেত স্বৈরতন্ত্রের দিক থেকে।
#### **শেখ মুজিবের শাসনকালে উল্লেখযোগ্য সমালোচনা**
১. **বাকশাল প্রতিষ্ঠা**
মাহমুদুর রহমানের ভাষ্যমতে, শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ১৯৭৫ সালে **বাকশাল** (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষিত হয়, যা বহুদলীয় রাজনীতির অবসান ঘটায় এবং গণতন্ত্রের কবর রচনা করে।
2. **মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ**
বাকশালের সময়ে শেখ মুজিব দেশের সব সংবাদপত্রকে বন্ধ করে দেন, শুধুমাত্র চারটি দৈনিক পত্রিকা চালু রাখতে দেন। এই পদক্ষেপের ফলে **মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে খর্ব** হয় এবং বিরোধী কণ্ঠগুলোকে রুদ্ধ করা হয়।
3. **রক্ষীবাহিনীর কার্যক্রম**
রক্ষীবাহিনীর নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তৈরি করে শেখ মুজিব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। মাহমুদুরের মতে, **রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল**, যা শাসনকালের অন্যতম অন্ধকার দিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
4. **দুর্ভিক্ষ এবং অব্যবস্থাপনা**
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যর্থতা জনগণের দুর্দশা বাড়ায়। এই দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, যা শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়।
#### **মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ**
মাহমুদুর রহমান দাবি করেন, শেখ হাসিনাও তার বাবার পথ অনুসরণ করে গত ১৫ বছরে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার **গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ** এবং **বিরোধী মতের দমন** নীতি অনুসরণ করেছে, যা ফ্যাসিবাদের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগও তোলেন তিনি।
#### **গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা**
মাহমুদুর রহমান বলেন, **গণমাধ্যমের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার বয়ান তৈরি** করা হয়েছে। কিছু পত্রিকা সরকারপন্থী প্রচারণা চালিয়ে মানুষের অধিকার খর্ব করেছে এবং ইসলামফোবিয়া ছড়ানোর জন্য জঙ্গি সংক্রান্ত সংবাদকে ব্যবহার করেছে। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ওপর **পুলিশি অভিযানের পর মিডিয়া একে ন্যায্যতা দিয়েছে** এবং বিরোধী মতকে দমন করেছে।
শফিকুল আলমও তার বক্তব্যে বলেছেন, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত **গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে নির্মোহ গবেষণা** করা।
### **মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যের প্রভাব**
এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যে **শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার শাসনকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে**, যা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে যে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে, তাও সাংবাদিক সমাজে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
### **উপসংহার**
মাহমুদুর রহমানের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শেখ মুজিবের শাসনকালকে স্বৈরতান্ত্রিক হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি বর্তমান সরকারের নীতিকেও ফ্যাসিবাদী বলে অভিহিত করেছেন। তার এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দেবে বলে ধারণা করা যায়।
No comments: