**ফিরতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার: রিভিউ শুনানির দিন ধার্য**
ছবিঃ সংগৃহীত |
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট আগামী ২৪ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এর ফলে **বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের সম্ভাবনা** তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
### **শুনানি এবং আইনজীবীদের অংশগ্রহণ**
২০ অক্টোবর বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন চেম্বার কোর্টে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট শিশির মনির এবং ড. শরীফ ভুঁইয়া।
এর আগে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১৬ অক্টোবর রিভিউ আবেদন জমা দেন। পাশাপাশি **সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার**ও আগস্ট মাসে একই বিষয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।
### **রিভিউ আবেদনে উপস্থাপিত যুক্তিগুলো**
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, এই রিভিউ আবেদনে দশটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি পেশ করা হয়েছে, যা নিম্নরূপ:
1. **বিচার বিভাগীয় প্রতারণার অভিযোগ**
- তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার **অবসরের ১৮ মাস পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন**, যা রিভিউ আবেদনে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসঙ্গতি ছিল, যা নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলাও চলমান।
2. **গণতন্ত্রের ধ্বংস এবং একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা**
- যুক্তিতে বলা হয়, **সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি**, আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সেটি নিশ্চিত করেছিল।
- ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ফলে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং **গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে।**
3. **সংবিধানের প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা**
- সংবিধানকে একটি **জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল** হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী এর প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। **সুপ্রিম কোর্টের দায়** হলো সংবিধানকে যান্ত্রিকভাবে নয়, বরং প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা।
4. **তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঐতিহাসিক ভূমিকা**
- জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি **মৌলিক মর্যাদা অর্জন করেছিল**, যা আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না।
- ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে **গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ** পেয়েছিল।
5. **আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ এবং বিতর্কিত নির্বাচন**
- ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ **দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা** নিয়ে সরকার গঠন করে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
- পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই আওয়ামী লীগ **সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বাতিল** করে, যা রিভিউ আবেদনে বিচার বিভাগীয় প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
**২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন এবং সমালোচনা**
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, **তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পরবর্তী নির্বাচনে** নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে **দলীয় সরকারের অধীনে ভোট জালিয়াতি** এবং **গণতন্ত্রের পরিপন্থী কার্যক্রম** পরিচালিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
**ফ্যাসিবাদ এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা**
রিভিউ আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে **একনায়কতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত** হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি **অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন** করা হয়, যা মানুষকে মুক্তি এনে দেয় এবং দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনা করে।
রিভিউ আবেদন এবং আপিল শুনানির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দেশে **পুনর্বহাল হতে পারে** বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এই প্রক্রিয়া যদি সফল হয়, তাহলে আগামী দিনে **সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন** আয়োজনের সম্ভাবনা জোরালো হতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
No comments: