পঞ্চদশ সংশোধনী: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলো, হাইকোর্টের রায় ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের হাইকোর্ট বহুল আলোচিত পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) এ রায় প্রদান করেন।
রায়ের মূল বিষয়বস্তু:
১. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির জন্য দায়ী পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
- এর ফলে ভবিষ্যতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হলো।
২. গণভোটের বিধান পুনর্বহাল
- পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত গণভোটের বিধান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা পুনর্বহাল করা হয়েছে।
- সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের পুনর্বহালের মাধ্যমে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
৩. সংবিধানের ৭ক, ৭খ, এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল
- ৭ক: সংবিধান বাতিল বা স্থগিতকরণকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে।
- ৭খ: সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা করেছিল।
- ৪৪(২): মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে হাইকোর্টের ক্ষমতা নির্ধারণ করেছিল।
- এই তিনটি অনুচ্ছেদ বাতিল করে হাইকোর্ট সংবিধানের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
- পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল নয়
- আদালত রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করেনি।
- বাকি বিষয়গুলো ভবিষ্যৎ সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে জাতির প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো সংশোধন বা রদবদল করা যায়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট:
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হয়। এর মাধ্যমে:
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
- জাতীয় চার মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন।
- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মের সমান মর্যাদা নিশ্চিত।
- ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত।
- নারীদের সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০-এ বৃদ্ধি।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া:
- বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে চ্যালেঞ্জ করা হয়।
- আদালতের রায়ে তারা দাবি করেন, এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
- হাইকোর্টের রায়ে উল্লিখিত সংশোধনীগুলো ভবিষ্যৎ সংসদ পুনর্বিবেচনা করতে পারবে।
- জনগণের মতামত নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গণভোটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রায়ের প্রভাব:
এই রায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংবিধানের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও আইন প্রণয়নে এ রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
No comments: