Banner

জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা

 ড. মুহাম্মদ 


সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতির সমান্তরাল উদ্যোগ

ছবি: সংগ্রিহিত


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি একযোগে চলবে। তার মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে সংস্কারের কাজে প্রত্যেক নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষত, বর্তমান ভোটারদের পাশাপাশি যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন, তাদেরও সংস্কারে ভূমিকা রাখতে হবে।

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, সংস্কারের কাজ সহজ করার লক্ষ্যে ১৫টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। জানুয়ারিতে এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পরই সংস্কার উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর হবে।


নির্বাচনের সময়সূচি ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, মার্চ মাসে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং এর পরপরই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, কমিশন যে কোনো সময় নির্বাচন পরিচালনায় প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী, কমিশন ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।


রাজনৈতিক দলের অবস্থান

বর্তমানে দেশে ৪৬টি নিবন্ধিত দল থাকলেও, রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। বড় দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতা হারিয়েছে, জাতীয় পার্টি কার্যত অকার্যকর, এবং জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়। বিএনপি প্রথম থেকেই নির্বাচনী সংস্কারের দাবি জানিয়ে এসেছে। তারা জানিয়েছে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেতে হলে নির্বাচনই প্রধান মাধ্যম। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আমরা নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত।"


জাতীয় সংলাপের মূল বক্তব্য

‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে ড. ইউনূস দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, এবং পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, "গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে সংস্কার কার্যক্রমে সকলের অংশগ্রহণ জরুরি।" আলোচকদের মতে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে চলমান ষড়যন্ত্র ও অস্থিতিশীলতা কমবে।


গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি

ড. ইউনূস বলেছেন, "আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক রূপান্তর ঘটাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিটি নাগরিক যেন তার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পছন্দমতো কর্মজীবন বেছে নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে বৈষম্য এবং সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই বিভেদ দূর হবে।"


সংস্কার কমিশনের ভূমিকা

ড. ইউনূস জানান, প্রতিটি সংস্কার কমিশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করবে। তবে এই সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার আগে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা হবে। তিনি বলেন, "সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য।"


নির্বাচনের সময়সূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ড. ইউনূস তার বিজয় দিবসের ভাষণে ঘোষণা দেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, "নির্বাচনের ট্রেন লাইনে উঠে গেছে, এটি চলতেই থাকবে।"


উপসংহার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিকে সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তার দৃষ্টিতে, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।

No comments:

Banner

Powered by Blogger.